ইসলাম
মন খারাপে মুমিনের করণীয়
মানুষের মন বিভিন্ন কারণে খারাপ হতে পারে। মন খারাপের কারণে যেমন পার্থিব ক্ষতি হয়, তেমনি পরকালীন ক্ষতিও হয়। ইসলামে এ বিষয়ের সমাধান রয়েছে। প্রথমত মুসলমানরা তকদির বা ভাগ্যের ওপর ঈমান রাখেন। যখন একজন মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস থাকে যে, আমার ভাগ্য মহান আল্লাহর হাতে। আমার জন্য যা উত্তম তিনি তা আমার সৃষ্টির পূর্বেই লিখে রেখেছেন। সে অনুসারেই দুনিয়ার জীবনে সুখ-দুঃখের সম্মুখীন হতে হয়। ভালো-মন্দ সব তার পক্ষ থেকেই আসে।
আসমানের ফয়সালায় যখন কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট হওয়া শেখে তখন সবরকম পেরেশানি, মানসিক চাপ খুব সহজে শেষ হয়ে যায়। তখন প্রতি মুহূর্তে সে ভাবে এটাই আমার ভাগ্যে ছিল এবং এতেই আমার কল্যাণ। এই তকদিরে বিশ্বাস রাখার মাধ্যমে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটে। টেনশন ও পেরেশানির মধ্যেও এমন মানসিক প্রশান্তি অনুভব হয় যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই।
আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তা হলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস : ১০৭)যেকোনো বিপদ-মসিবত বা পেরেশানির সময় নামাজের ব্যাপারে যতœবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন (আবু দাউদ : ১৩১৯)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি সামান্য জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও নামাজের মাধ্যমে সমাধান করতেন।
মানসিক চাপ কমাতে ইস্তেগফারের জুড়ি নেই।মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। ফলে তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে’ (সুরা নুহ : ৭১)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ : ১৫২০)মানসিক চাপ কমাতে নিয়ম করে দোয়া করা উচিত। কারণ দোয়া হলো ইবাদতের মূল। দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন।
না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো-‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জয়ালিমিন, অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি : ৩৫০৫)
চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুল (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো-‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল, অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমনপীড়ন থেকে’ (আবু দাউদ : ১৫৫৭)। এসব আমলের মধ্যে থাকলে আশা করা যায় মুসলমানরা যাবতীয় পেরেশানি ও অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।