শিশু মুনতাহার নির্মম হত্যাকাণ্ড: গৃহশিক্ষিকা ও পরিবারের সদস্যসহ ছয়জন গ্রেপ্তার
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় নিখোঁজের সাত দিন পর মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানি কুতুবজান বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় ছয়জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোররাতে স্থানীয়রা মুনতাহার মরদেহ মাটি থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলার সময় গৃহশিক্ষিকার মাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। মুনতাহার মরদেহটি উদ্ধার করার সময় গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদের কন্যা।
কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুনতাহা একটি আপেল খেতে খেতে গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়ার ঘরে প্রবেশ করলে মার্জিয়া তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান মরদেহটি বাড়ির পেছনের নর্দমায় ফেলে দেয়।শনিবার রাতে গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়াকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়।
পরবর্তীতে রাতের বেলায় স্থানীয়রা তল্লাশি চালিয়ে মরদেহটির খোঁজ পায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, মুনতাহার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পুলিশ তৎপর ছিল তবে কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া দেখতে পেয়ে সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।
স্থানীয়দের ধারণা, হত্যাকারীরা প্রথমে মাটিতে পুঁতে রেখে মরদেহ লুকানোর চেষ্টা করে এবং পরে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলে বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। মুনতাহার পরিবারসহ স্থানীয়দের সাথে মার্জিয়ার পরিবারের পূর্ব বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে।মুনতাহা নিখোঁজ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়।
দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে তার সন্ধান দাতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। কয়েকজন প্রবাসী মুনতাহার সন্ধান দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া, সিলেটের নারী সমাজকর্মী ফারমিস আক্তার মুনতাহার সন্ধান দাতার জন্য একটি স্বর্ণের চেইন পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।অবশেষে স্থানীয়দের তৎপরতায় পুলিশের সহায়তায় মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে।