অবহেলায় পড়ে আছে নওয়াব ফয়জুন্নেসার স্মৃতিজড়িত বাড়িটি
উপমহাদেশের একমাত্র মুসলিম নারী নওয়াব। গড়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অকাতরে করে গেছেন সমাজসেবা। বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক। এসব অবদান স্মরণ করে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীর ১১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু কুমিল্লার লাকসামে ডাকাতিয়া নদীর গা ঘেঁষে তাঁর স্মৃতিজড়িত বাড়িটি আজ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। কারুকার্যময় বাড়ির পলেস্তারা খসে পড়ছে। উদ্যোগ নেই সংস্কারের।
নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে দক্ষিণমুখী দ্বিতল ভবন। এ বাড়ির পশ্চিম পাশে একতলা বৈঠকখানা। পূর্ব পাশে একতলা একটি ভবন। মূল ভবনের পেছনে দ্বিতলবিশিষ্ট রংমহল। সব কটি স্থাপনাই এখন জরাজীর্ণ। পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভবনের মধ্যে নানা ধরনের পরগাছা বংশবিস্তার করছে। মূল বাড়িটির নিচতলা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় আছে। দ্বিতীয় তলায় থাকেন নওয়াব ফয়জুন্নেসার পঞ্চম বংশধর প্রয়াত সৈয়দ আজিজুল হকের স্ত্রী ও সন্তানেরা। এ বাড়িতে বসবাস করছেন রেহানা হক। তিনি বলেন, ‘একসময় বাড়ির সামনে সাজানো-গোছানো ফুলের বাগান ছিল। এখন আর সে রকম নেই। আমরা নিজেরাই টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছি। অর্থের অভাবে পুরো বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যাচ্ছে না।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, ১৮৩৪ সালের ২৮ মে কুমিল্লার হোমনাবাদ পরগনার (বর্তমানে লাকসাম উপজেলার) পশ্চিমগাঁও গ্রামে নওয়াব ফয়জুন্নেসার জন্ম। আহমেদ আলী চৌধুরী ও আরফুননেছার প্রথম কন্যাসন্তান তিনি। মা-বাবার মৃত্যুর পর তিনিই জমিদারি দেখাশোনা করেন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। ২০০৪ সালে তাঁকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল চন্দ্র শীল বলেন, ‘১৯৮০ সালে এ কলেজ থেকেই আমি এইচএসসি উত্তীর্ণ হই। ৩৯ বছর পর আমি এখানে অধ্যক্ষ হয়ে আসি। নওয়াবের বাড়িটির খুবই দুরবস্থা। এটি ঠিকমতো সংরক্ষণ হচ্ছে না। এটি সংস্কার ও সংরক্ষণ জরুরি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, পর্যায়ক্রমে এই বাড়ি সংস্কার করা হবে। গত বছর বৈঠকখানা সংস্কার করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসাকে তুলে ধরার জন্য জেলা প্রশাসন তাঁর জীবনী বই আকারে বের করেছে। বাড়িটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।