দেশজুড়ে

তথ্য কমিশনারের গাড়িটি যুবকের পা গুঁড়িয়ে চলে গেলো

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন আহসান মাহমুদ (৩০)। সেখানে একটি পাজেরো গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। এতে তাঁর বা পায়ের হাড় চার টুকরা হয়ে যায়। পায়ের কয়েকটি জায়গায় হাড় গুঁড়া হয়ে গেছে। চাকরির খোঁজে যে আহসান ছোটাছুটি করছিলেন, তিনি এখন হাসপাতালের বিছানায়।
আহসান মাহমুদ এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন গত ৩ ডিসেম্বর। এই ঘটনায় গাড়ির নম্বর উল্লেখ করে ১২ ডিসেম্বর তাঁর বড় ভাই ছাইয়েদুল ইসলাম রমনা থানায় মামলা করেন। কিন্তু এক মাসেও গাড়িটি কার, কে চালাচ্ছিলেন, তা বের করতে পারেনি পুলিশ। প্রথম আলো খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, আহসান মাহমুদকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি তথ্য কমিশনের নামে নিবন্ধিত। ব্যবহার করেন তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক। দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করার এখতিয়ার প্রতিবেদকের নেই।

আহসান মাহমুদ তেজগাঁও কলেজ থেকে ২০১৯ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। আহসান অনেক দিন ধরে চাকরির খোঁজ করছিলেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
রমনা থানায় করা মামলায় মো. ছাইয়েদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে তাঁর ছোট ভাই আহসান মাহমুদ মোটরসাইকেলে করে পরীবাগ থেকে ইস্কাটন গার্ডেন সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। সচিব কোয়ার্টারের নতুন ভবনের সামনে পৌঁছামাত্র ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-৩৩৯১ নম্বরের একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রুত গতিতে চালিয়ে তাঁর ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলটিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন দুই পথচারী তাঁকে উদ্ধার করে শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নিয়ে যান, যেটি পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিতি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তাটি তখন ফাঁকা ছিল। গাড়িটি হঠাৎ একটি ভবনের ফটক থেকে বেরিয়ে বেপরোয়াভাবে বাঁয়ে বাঁক নেয়। গাড়িটি রাস্তার এতটাই জায়গা নিয়েছিল যে তিনি মোটরসাইকেল সরানোরও কোনো সুযোগ পাননি। গাড়িটি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ায়। এরপর দ্রুত বেগে চলে যায়। যতটুকু সময় গাড়িটি থেমে ছিল, সে সময়ে তিনি এবং উপস্থিত লোকজন গাড়ির নম্বরটি দেখতে পান।

এই ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলার তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে গাড়িটি আহসান মাহমুদকে ধাক্কা দিয়েছিল, সেটি তথ্য কমিশনের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। গাড়িটি কার এবং কে চালাচ্ছিলেন, সেটি জানার জন্য কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উত্তর এলে বিষয়টি জানা যাবে।
মামলায় উল্লেখ করা গাড়ির নম্বরটি ধরে বিআরটিএতে খোঁজ নেয় প্রথম আলো। গাড়িটির বার্ষিক কর যিনি দিয়েছেন, তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিতে যোগাযোগ করা হলে ওই ব্যক্তি নিজের নাম মুক্তার হোসেন বলে জানান। তিনি তথ্য কমিশনের ডেসপাচ রাইডার পদে কর্মরত রয়েছেন। আহসান মাহমুদকে ধাক্কা দেওয়া গাড়ির নম্বর উল্লেখ করে জিজ্ঞাসা করলে মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি মিতসুবিশি পাজেরো গাড়ি। গাড়িটি ব্যবহার করেন তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক।
তথ্য কমিশনার আবদুল মালেকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। ঘটনাটি জানেন কি না, এমন প্রশ্ন করার পর তিনি খেপে যান। থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ কিছু জিজ্ঞাসা করেছে কি না সেই প্রশ্নে আরও ক্ষিপ্ত হন তিনি। বারবার বলতে থাকেন, তাঁকে এমন প্রশ্ন করার এখতিয়ার এই প্রতিবেদকের নেই। একপর্যায়ে কোনো উত্তর না দিয়েই তিনি ফোনটি কেটে দেন।

তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি গত বছরের জানুয়ারিতে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
আহসান মাহমুদের বড় ভাই ছাইয়েদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পরপর তাঁর ভাইকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৬ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে পায়ে দুটো অস্ত্রোপচার করা হয়। হাড় জোড়া দেওয়ার জন্য পাত লাগানো হয়। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরে আসার পর আহসানের পায়ে পচন ধরে। ২৫ ডিসেম্বর তাঁকে আবার বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইতিমধ্যে চিকিৎসায় ১০ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়ে গেছে।
ছাইয়েদুল বলেন, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁর আয়েই মূলত সংসার চলে। কিছু জমানো টাকা ছিল, যা পুরোটাই ভাইয়ের চিকিৎসার পেছনে শেষ হয়ে গেছে। এখন ধারদেনা করে চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, বিচারের আশায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও তেমন অগ্রগতি দেখছেন না।

Show More

Related Articles

Back to top button