দেশজুড়ে

পা দিয়ে লিখে চারবার জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্না এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন যশোরের অদম্য মেধাবী তামান্না আক্তার। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া তামান্না যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পড়তে চান।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের তামান্নার জন্ম থেকে দুটি হাত নেই। নেই ডান পা। আছে শুধু বাম পা। সেই পা দিয়ে লিখে পিইসি (প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা), জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা), এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা) এবং এইসএসসিতে (হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা) জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তামান্না আক্তার।

তামান্না যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কেন্দ্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮ দশমিক ২৫।

তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (নন–এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ে। তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

তামান্না আক্তার বলেন, ‘২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে আমি ৪৮ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই, তা নির্বাচন করে আবেদন করতে হবে। আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়তে চাই। আমি এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হতে চাই।’

তামান্নার মা খাদিজা পারভীন বলেন, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলেন। পরে ভেবেছেন, ওকে কারও বোঝা হতে দেওয়া ঠিক হবে না। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা শুরু করেন। কলম দেন। কাজ হলো না। এরপর মুখে কলম দেন। তাতেও কাজ হয়নি। পরে সিদ্ধান্ত নেন, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করান। মাত্র দুই মাসের মাথায় ও পা দিয়ে লিখতে শুরু করল। এরপর ছবি আঁকা শুরু করে।

এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পায় তামান্না। বৃত্তিও পায়। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর তামান্নাকে বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি) সে জিপিএ-৫ পায়। ২০১৯ সালে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এরপর তাকে বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এবারের এইচএসসিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘তামান্নার জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। তারপরও হাল ছাড়িনি। তামান্নার সঙ্গে আমাদের থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়েছে। এজন্য আমি খুব খুশি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তামান্না লেখাপড়ার সুযোগ পেলে আরও খুশি হবো।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button