রাজনীতি

নিষিদ্ধ ‘ছাত্রলীগের আবরণে’ নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

দেশে ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ নামে নতুন এক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মান সমুন্নত রাখা, স্বাধীনতা ও সংবিধান সুরক্ষিত রাখা এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল রিয়াদ-আদনান অন্তরের নেতৃত্বে এই সংগঠন যাত্রা শুরু করেছে।শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীরা ঢাকার উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে গোপনীয়তার সঙ্গে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

ওই অনুষ্ঠানের কয়েকটি ছবি এবং সংগঠনটির ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ সংগঠনটির ঘোষণাপত্র ও লক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনে ছাত্রলীগের আবরণে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।সংগঠনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সুরক্ষিত রাখা।

মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানকে সমুন্নত রাখা।‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ সংগঠনটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আল রিয়াদ-আদনান অন্তর। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ঘোষণা অনুযায়ী, সংগঠনটির মহাসচিব খলিলুল্লাহ গাজী এবং মূখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন হুমায়ুন কবির জয়। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান অন্তরের রাজনৈতিক পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। বাকীদের পরিচয় জানা যায়নি।অন্তর টঙ্গী পূর্ব থানার এরশাদ নগরের ১ নম্বর ব্লকের ভান্ডারী গলির বাবুল মিয়ার ছেলে।

তিনি গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ টঙ্গীর ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে ইয়াবাসহ টঙ্গীর কলেজগেট থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে র‍্যাব বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এরপর ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হন আল রিয়াদ-আদনান অন্তর।৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকার সুযোগে অন্তর কোথাও কোথাও নিজেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করাই নতুন এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন আল রিয়াদ আদনান অন্তর।তিনি জানান, শুধু রাজনৈতিক কার্যক্রম নয় বরং সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবিক কাজের মাধ্যমে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করবে সংগঠনটি। শিগগিরই মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।বাংলাদেশ মুক্তির ডাক-৭১ এর ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের বয়স ৫৩ বছর হলেও এদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার ন্যায্য সম্মান পায়নি। ক্ষমতার যারা গিয়েছে তারাই নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে যাকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট বিতরণ করেছে।অথচ সত্যিকার এমন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এমনকি কেউ কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এদেশের স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করতে চায় ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ। ২০২৪ সালকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দাবি করে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা না করার ফলে তরুণ প্রজম্ম ১৯৭১ সালের ইতিহাস ধারণ করতে পারছে না। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শাসক, নীতা নির্ধারক ও রাজনীতিবিদের তেমন প্রতিক্রিয়াও নেই।

গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে প্রকাশ্য দিবালোকে একাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত এবং রক্তাক্ত করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও এদেশের মানুষ স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি।আমরা এমন এক ভঙ্গুর সময়ে স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক-৭১’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিচ্ছি যে, যে সময়ে এদেশের বীরমুক্তিযুদ্ধো এবং তাদের পরিবার নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে অনিরাপদ বোধ করছে।স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে ও অধিকার বঞ্চিত মুক্তিযুদ্ধা পরিবার ও তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না থাকায় আমরা তাদের পক্ষে অবস্থান নিতেই এই সংগঠন এর দায়িত্ব নিচ্ছি।

দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া, এদেশের মানবাধিকার লঙ্গনকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমরা বদ্ধপরিকর। স্বাধীনতাবিরোধী সকল শক্তিকে শক্ত হাতে রুখে দিতে ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক-৭১’ এর ঘোষণা করছি এবং দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাসী সকল সচেতন নাগরিককে অনুরোধ করছি নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন হিসেবে আমাদের পাশে থাকুন।

Show More

Related Articles

Back to top button