স্বাস্থ্যকথা

ওমিক্রন শনাক্তকারী দ. আফ্রিকার চিকিৎসক জানালেন উপসর্গ কেমন

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে প্রথম সতর্ক ঘণ্টা বাজানো দক্ষিণ আফ্রিকার একজন চিকিৎসক বলেছেন, তার কাছে চিকিৎসা নেওয়া সন্দেহভাজন কয়েক ডজন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর শরীরে কেবলমাত্র মৃদু উপসর্গ দেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াই তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, গত ১০ দিনে তিনি অন্তত ৩০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন; যারা করোনা পজিটিভ ছিলেন। তবে তাদের শরীরে তিনি কিছু ‘অপরিচিত উপসর্গ’ দেখতে পেয়েছেন।

প্রিটোরিয়া থেকে এএফপিকে তিনি বলেছেন, ওই রোগীদের ক্ষেত্রে তিনি যা দেখেছেন, সেটি হলো ‘চরম ক্লান্তি।’ তবে তরুণ রোগীদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ ছিল একেবারে ‘অস্বাভাবিক।

রোগীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে। তাদের অর্ধেকই করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া ছিলেন। অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেছেন, ‘তাদের পেশীতে মৃদু ব্যথা, গলায় খুসখুস ভাব এবং শুকনো কাশি ছিল। মাত্র অল্প কয়েকজনের শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বেশি ছিল।

ওমিক্রনের এই মৃদু উপসর্গগুলো করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গের তুলনায় ভিন্ন। করোনাভাইরাসের অন্যান্য কিছু ধরনে ওমিক্রনের চেয়েও জটিল উপসর্গ দেখা যায়।দক্ষিণ আফ্রিকা মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি

অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি গত ১৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের করানার নতুন ধরনের ব্যাপারে প্রথম সতর্ক করে দেন। ওই সময় তিনি ৩০ জন করোনা রোগীর মধ্যে সাতজনের শরীরে অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখতে পান; যা করোনার অন্যান্য ধরনগুলোর উপসর্গের চেয়ে ভিন্ন এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে ক্লিনিক্যাল চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা ততক্ষণে এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে জেনে যান। তারা প্রথমে এটিকে বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে শনাক্ত করেন। যা পরবর্তীতে গত ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর আতঙ্কিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে তড়িঘড়ি বৈশ্বিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শাস্তি হিসেবে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করেছে। একই সঙ্গে তাদের অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটি।

ওমিক্রনের ঝুঁকির ব্যাপারে এখনও বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব না হলেও বিশ্বজুড়ে এই ভ্যারিয়েন্টের ‘বহু রূপান্তর’ এবং ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করে হইচই ফেলে দেওয়ার ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত এই ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ভ্যারিয়েন্টটির আচরণ বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

স্পাইক প্রোটিনে ৩২ বার রূপ বদলে ফেলা এই ভ্যারিয়েন্টকে অত্যন্ত সংক্রামক এবং টিকাপ্রতিরোধী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে এই ভ্যারিয়েন্ট ফাঁকি দিতে পারে কি-না সেটি নিয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে।

কোয়েৎজি বলেছেন, ‘আমরা বলছি না যে, আগামীতে গুরুতর রোগ হবে না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা যে রোগীদের দেখেছি; যাদের টিকা দেওয়া হয়নি, তাদেরও হালকা উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

‘আমি বেশ নিশ্চিত…ইউরোপের অনেক লোকের শরীরে ইতোমধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট পৌঁছে গেছে,’ মন্তব্য করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে দেশটিতে যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের তিন-চতুর্থাংশেরই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, হংকং এবং ইসরায়েলসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেছেন, ‘আমরা সংক্রমণের আরও বৃদ্ধি দেখতে পাবো।

আফ্রিকা মহাদেশে করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে দৈনিক কোভিড-১৯ পজিটিভের হার বুধবার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও শনিবার তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবে বিশ্বের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার করোনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ৮৯ হাজার ৭৯১ জন মারা গেছেন।

সূত্র: এএফপি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button