জাতীয়

বুথে সহযোগিতার কথা বলে আমার ভোটটি দিয়ে দিলেন নৌকায়

চতুর্থ ধাপে আজ রোববার ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাচনে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে প্রবেশে বাধা, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া, ইভিএমে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মী অবস্থান করাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৬০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা–শঙ্কা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সকাল নয়টার দিকে ১ নম্বর ওয়ার্ডের আরকে স্টেট উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সালন্দর এলাকার বুথে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। নৌকার এক সমর্থক ভোটের গোপন কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে নৌকার ওই সমর্থক তাঁর নাম মহেন্দ্র রায় পরিচয় দিয়ে বলেছেন যে ভোটারদের সহযোগিতার জন্য গোপন কক্ষে আসতে হয়েছে। অনেক ভোটার সহযোগিতা চান তাঁদের কাছে। ওই কেন্দ্রের ভোটার রাইসুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘ধানের শীষে ভোট দিতে চাইলে বুথে থাকা এজেন্টের লোকটি সহযোগিতার কথা বলে আমার ভোটটি দিয়ে দিলেন নৌকা মার্কায়।’ কেন্দ্রের অন্য বুথ ঘুরেও একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে পাশের জগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারীদের দীর্ঘ সরি থাকলেও বুথে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। দেখা যায়, সেখানেও প্রতিটি বুথে নৌকার কর্মীরা গলায় নৌকার কার্ড লাগিয়ে গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে ভোটারদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে জগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের ভোট প্রদানে নির্দেশনা দিচ্ছেন—কেউ এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজ উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। পরে বুথ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও নৌকার সমর্থকেরা দল বেঁধে অবস্থান করছেন। ভোটাররা গোপন কক্ষে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে নৌকার ভোট দিতে বাধ্য করছেন।

আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে নির্বাচনের পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আমীন। এ সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ফয়সল আমীন বলেন, নৌকার সমর্থকেরা ২১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ভোটারদের বাধা দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাধা উপেক্ষা করে যেসব ভোটার কেন্দ্রে যেতে পারছেন, তাঁদের সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে অবস্থান করে মেয়র পদে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন।

বিএনপি ভোট বর্জন করছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, ‘এই ভোট বর্জন করেই কী আর না করেই কী! আমরা ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে আছি।’

তবে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম বলেন, গোপন কক্ষে কোনো এজেন্ট থাকার কথা না। এগুলো মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং মো. জিলহাজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। খারাপ কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। বিএনপির এজেন্ট বের করে দেওয়ার কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি বলে তিনি জানান।

Show More

Related Articles

Back to top button