দেশজুড়ে

নিঃসন্তান কবিরাজ দেন সন্তানের হওয়ার চিকিৎসা !

বললেন 'সবই তিনার লীলাখেলা'

প্রেমে রাজি করানো, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য দূর করণ, স্বামীকে বশ করাসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান করেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী বাজারের কবিরাজ আব্দুল কুদ্দুস। তবে তার থেকেও ভয়ঙ্কর তার ছেলে ইব্রাহিম হোসেন। তার চিকিৎসা মানে না বিজ্ঞান। সকল জটিল ও কঠিন রোগের সমাধান তার জানা। নিঃসন্তান দম্পতিকে দেন সন্তান জন্ম দেওয়ার দাওয়াই দেন। অথচ বিয়ের ১০ বছরেও নিজের কোনো সন্তান নেই কবিরাজ ইব্রাহিমের। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে এই বাবা-ছেলের ভুয়া কবিরাজিতে বিশ্বাস করে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছে ওই বাড়িতে। সুযোগ বুঝে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। তাদের বিরুদ্ধে কবিরাজির নামে নতুন নতুন ফন্দি করে আগন্তুকদের কাছ থেকে টাকা আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পছন্দের মানুষকে প্রেমে রাজি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় এক কিশোরের নিকট থেকে সাত হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কবিরাজ কুদ্দুস। কবিরাজের কাছে আসা মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আকাশ আলীর স্ত্রী মেরিনা খাতুন বলেন, সাত বছর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা হয়নি। তাই হুজুরের কাছে এসেছি। তিনি ১১০০ টাকা নিয়ে পানি দিয়েছেন। ১৫ দিন পরে আবার আসতে বলেছেন।

চুয়াডাঙ্গার জালশুকা গ্রামের মরজেম আলীর স্ত্রী আরজিনা খাতুন জানান, আমার স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হয় না। তাই হুজুরের কাছে এসেছি। হুজুর পানি আর তাবিজ দিয়ে ৮০০ টাকা নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জালশুকা গ্রামের এক গৃহবধূ জানান, স্বামীকে বশ করার জন্য কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম। ১৫০০ টাকা নিয়ে দুটি তাবিজ দিয়েছিল। কোনো কাজ হয়নি।

আসমানখালী বাজারের আনিছুর রহমান বলেন, কুদ্দুস কবিরাজের ছেলে ইব্রাহিম ১০ বছর আগে বিয়ে করেছে। তার স্ত্রীর আজও সন্তান হয়নি। তিনি আবার পরস্ত্রীর হাত দেখে সন্তান এনে দিচ্ছেন। এটা বড় ধরনের প্রতারণা। তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।

অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘সবই তিনার লীলাখেলা। আমি শুধু কিতাব পড়ে মানুষকে সেবা দিয়ে থাকি। আমি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দিয়ে থাকি। অ্যালোপ্যাথি প্রেসক্রিপশন লিখে দিই। মহিলাদের বাধক বা রাশিফল দেখে বলে দিতে পারি তার গর্ভে কি সন্তান আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার চাঁদমারী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস আলমডাঙ্গার নানবার গ্রামের মসজিদে ইমামতি করতেন এক সময়। কবিরাজির নামে প্রতারণা করে মানুষের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন বছর আগে তাকে ইমামের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। তারপর থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী আসমানখালী বাজারে কবিরাজির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।

Show More

Related Articles

Back to top button