অন্যান্য

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাবে না জিপিএ-৫ পাওয়া লাখো শিক্ষার্থী

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় গত ১৫ অক্টোবর। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফল বলে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ফল পুনঃনিরীক্ষণে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

জিপিএ-৫ পাওয়াসহ যারা তুলনামূলক ভালো ফল করেছেন, তাদের অধিকাংশের লক্ষ্য পাবলিক বিশ্ববিদালয়। বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, খুলনা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চান তারা। তাছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট এবং সরকারি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মুখিয়ে থাকেন।

অথচ দেশের সব ধরনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবমিলিয়ে ভর্তিযোগ্য শূন্য আসন মাত্র ৫৫ হাজারের মতো। সেই হিসাবে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের বড় অংশই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তাছাড়া জিপিএ-৫ না পেলেও কাছাকাছি ফল করা অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে ভর্তির জন্য জায়গা করে নেবেন।

এতে জিপিএ-৫ ধারী লাখো শিক্ষার্থীর কপাল পুড়বে।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক কলেজগুলো ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা বিবেচনায় সবাই ভর্তির সুযোগ পাবেন। উচ্চশিক্ষা থেকে কেউ বঞ্চিত হবেন না।

তবে শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী পাবেন না। ফাঁকা থেকে যাবে তাদের আসন।ইউজিসির সবশেষ (২০২২) প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী—দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৫৪ হাজার ৫১৫টি। নতুন চালু হওয়া আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ আসন তৈরি হয়েছে।

সেই হিসাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে) সর্বমোট আসন ৫৫ হাজারের কিছু বেশি।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শূন্য আসন, তাতে প্রায় ৯৬ হাজার জিপিএ-৫ ধারীও ভর্তির সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ তুলনামূলক ভালো বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০ হাজার।

যদি ধরে নেওয়া হয়, ভর্তি পরীক্ষায় সবগুলো আসনে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পাবেন। তবু ৫৫ হাজারের বেশি জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। এখানে ভর্তির জন্য চলবে তুমুল লড়াই।অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশের অনার্স কলেজগুলোতে ভর্তিযোগ্য আসন প্রায় ৬ লাখ। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার।

তাছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস বা ডিগ্রি) কোর্সসহ এমন বিভিন্ন কোর্সে আসন সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। সেই হিসাবে দেশে এইচএসসি, আলিম ও এইচএসসি (ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পাস করা ১০ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর সবাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন।তবে অল্প কিছু নামি প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ সবার।

সেখানে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। একদিকে ভর্তির জন্য যখন লড়াই চলবে, অন্যদিকে অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কামিল-ফাজিল মাদরাসা শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। ভর্তি শেষেও শূন্য থেকে যাবে অনেক আসন।রাজশাহী কলেজ থেকে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন নুরুন্নাহার নাঈমা। তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

তার প্রথম টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও রুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।রাজশাহী কলেজ এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তাহলে সেই কলেজে স্নাতকে ভর্তি না হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন যেতে চাইছেন—প্রশ্নে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে নাঈমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজশাহী কলেজ তো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্ডারে।

এখানে কেন পড়বো? আমি ভার্সিটিতে পড়বো। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর কিংবা রাজশাহী ভার্সিটি আমার পছন্দ। রুয়েটেও পরীক্ষা দেবো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে নেই। কোথাও না হলে বেসরকারিতে কোথাও ভর্তি হতে হবে।’দেশের মাদরাসাগুলোর মধ্যে বরাবরই শীর্ষে তামীরুল মিল্লাত মাদরাসা। সেখান থেকে এ বছর সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ইয়ানুর রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মাদরাসা থেকে আলিম পাস করার পর ইসলামি শিক্ষার দিকে না গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার টার্গেট জেনারেল ভার্সিটি (সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়)। আমাদের এখান থেকে যারা পাস করেন, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তেমন কেউ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল-কামিল পড়েন বলে শুনিনি।’

Show More

Related Articles

Back to top button