প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রেমিক আটক(ভিডিও)
গোপালগঞ্জের এক মাদরাসাছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করেন এক যুবক। পরে সেসব ছবি-ভিডিও দিয়েই শুরু হয় প্রতারণা।
হাতিয়ে নিতে থাকেন টাকা ও গহনা।
এক পর্যায়ে পরিবারকে জানালে মেয়েটিকে তড়িঘড়ি করে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েননি ওই যুবক। মেয়ের স্বামী ও তার আত্মীয়দের এসব আপত্তিকর ছবি পাঠানোর পর বিয়ে ভেঙে যায়। পরে মেয়েটিকে আরেক জায়গায় বিয়ে দেওয়া হলে একইভাবে ওই বিয়েও ভেঙে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক তৎপরতা শুরু হয়। সদর দপ্তর থেকে গোপালগঞ্জ ও বগুড়া পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় একাধিক অভিযান চালিয়ে অবশেষে বগুড়া থেকে রিফাত শেখ ওরফে আকাশ নামে ওই যুবককে আটক করা হয়।
গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া সদর থানার কলোনী চক ফরিদ মহল্লার একটি বাড়ি থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ফেসবুক পেজে একটি বার্তা পাঠান।
তিনি বলেন, তার পরিচিত ও প্রতিবেশী এক মাদরাসাছাত্রী অনলাইন সম্পর্কে জড়িয়ে রিফাত শেখ ওরফে আকাশ নামে এক যুবকের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ও তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে অনলাইনেই মেয়েটির কিছু আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করেন আকাশ। পরবর্তীতে এ ছবি-ভিডিও ব্যবহার করে নানাভাবে মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করতে থাকেন তিনি। হাতিয়ে নিতে থাকেন টাকা-পয়সা ও গহনা। শুরুতে মেয়েটি তার পরিবারকে কিছুই জানায়নি।
এক সময় পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে তার সম্মতিক্রমে তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আকাশ মেয়েটির স্বামী ও তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের কাছেও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে বিয়েটি ভেঙে দেয়। এর কিছুদিন পর পরিবারের উদ্যোগে মেয়েটিকে পুনরায় বিয়ে দেওয়া হয়। আকাশ একইভাবে দ্বিতীয় বিয়েটিও ভেঙে দেয়।
সর্বশেষ আর কোনো উপায় না দেখে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে পরামর্শ করে মেয়েটি ও তার পরিবার। ওই ব্যক্তি সব কথা শুনে নিজেই বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে একটি বার্তা পাঠিয়ে মেয়েটির জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা চান। তবে আকাশ নামে ওই যুবকের সুস্পষ্ট কোনো ঠিকানা বা বিস্তারিত পরিচয় জানা ছিল না মেয়েটির। সে শুধু জানতো ছেলেটির বাড়ি বগুড়া।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, বার্তাটি পাওয়ার পর মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যাদি সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবগত করা হয় এবং ওই যুবককে শনাক্ত করে আটকে পুলিশ সুপার বগুড়া মো. আলী আশরাফ ভূঞাকে অনুরোধ জানানো হয়।
এরপর পুলিশ সুপার বগুড়া তাৎক্ষণিকভাবে তার ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করেন। এ টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য নানা স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আকাশকে বগুড়া সদর থানার কলোনী চক ফরিদ মহল্লার একটি বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
আটকের পর আকাশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব করতেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে প্রেমের অজুহাতে অন্তরঙ্গ হয়ে সেসব মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ ও তা ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন।
এদিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে বাদীর উপস্থিতিতে দ্রুততম সময়ে পর্ণোগ্রাফি আইনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে গ্রেফতার আকাশকে বগুড়া থেকে গোপালগঞ্জ নেওয়া হয়।