আসছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা!
জ্বালানি তেলের পর এবার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। চলতি মাসের যে কোনো সময় দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানী করে। কিন্তু ওই গণশুনানীর পর এখন পর্যন্ত দাম নির্ধারণ করেনি। তাই ধরে নেয়া
হচ্ছে তেলের দাম বাড়ানোর পর এখন বিইআরসি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে। অপরদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি গণশুনানীর আয়োজন করতে পারে।তবে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। এর ওপর আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসলে সেটা দেশের মানুষের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে পরিণত
হবে।গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভর্তুকি সামাল দিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল। এরপর চলতি বছরের শুরুতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর গুঞ্জন শুরু হয়।কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রস্তাবে বলা হয়, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা না
হলে ভর্তুকির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অর্থ সংকটের কারণে বিপুল অঙ্কের এই ভর্তুকি বহন করা সম্ভব নয়।সভায় অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ হ্রাসের কারণে তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্র থেকে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ায় ভর্তুকি বাবদ ১৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা
প্রয়োজন হবে বলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। কিন্তু বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে এ পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া সম্ভব না। তাই নতুন বছরের শুরু থেকেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) উচ্চমূল্য এখনো অব্যাহত রয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে এলএনজি আমদানি কমিয়ে
দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনাও বন্ধ রয়েছে। দাম বাড়ানো না হলে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, সবার
সঙ্গে আলোচনা করে দাম বাড়ানোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।পরবর্তীতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা না থাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে বিইআরসি আবারো তৎপর হতে পারে।গতকাল শনিবার বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাসের দাম সমন্বয় হওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দামের বিষয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সিদ্ধান্ত নেবে। এই দুই জ¦ালানির দাম সমন্বয় না করা হলে ভর্তুকি বাড়বে।কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, দিনে ৯০ কোটি টাকা লোকসানের অজুহাতে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, এটা বেআইনী।
অথচ বিইআরসি আইনের ২২ এবং ৩৪ ধরা মতে, জ¦ালানির দাম বাড়ানোর দায়িত্ব তাদের। ২৭ ধারা মতে, বিপিসি বিইআরসির লাইসেন্সি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিইআরসি এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করছে। পেট্রোলিয়াম জাত পণ্যের দাম বিইআরসি নির্ধারণ করলে বোঝা যেত বিপিসি লিটার প্রতি কত বেশি দাম নিচ্ছে। জ্বালানি তেলের লুণ্ঠন দূর
করতে হলে বিইআরসির মাধ্যমে দাম নির্ধারণের কোনো বিকল্প নেই।গ্যাস বিদুতের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে শামসুল আলম আরো বলেন, এখন আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে বলে শুনছি। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর এখন আবার যদি গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে সেটা এদেশের মানুষের জন্য ‘মরার উপর
খাঁড়ার ঘা’ এর সমান হবে। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে আমরা সরে আসার আহ্বান জানাবো।জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলাম রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে বাড়তি গ্যাসের বিল আদায় করে। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। এখন আবার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
রাষ্ট্র অবৈধভাবে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এভাবে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনো সঠিক পদ্ধতি না। বিইআরসি থাকতে রাষ্ট্র কীভাবে আইন অমান্য করে জ¦ালানির দাম বৃদ্ধি করেছে এটাই আমাদের প্রশ্ন। এই অবস্থায় তারা আবারো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে সেটা জনগণের জন্য এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করবে।