জাতীয়নারী ও শিশু

বিনা বেতনে তিন বছর ধরে লাশ কাটা ঘরে কাজ করেন সেলিনা!

মর্গ বা লাশ কাটা ঘরের নাম শুনলে অনেকেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। কিন্তু এমনই এক মর্গে তিন বছর ধরে কাজ করছেন সেলিনা বেগম নামে এক নারী। তাও আবার বিনা বেতনে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন অদম্য সাহসী এই নারী। 

তিন বছর ধরে মর্গের লাশ কাটা ঘরে ডোমের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ভাগ্য বদলাতে কাজ করছেন এখানে। কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি তার। প্রতিদিন সকাল ১০টায় আসেন মর্গে। লাশ কাটা থেকে শুরু করে সেলাই, ধোয়া-মোছা সবই করেন সেলিনা।

লাশ কাটা ঘরের সেলিনা বেগম ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নিজের জীবন যুদ্ধের কথা বলেছেন। কীভাবে লাশ কাটা ঘরের কাজ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চার বোন দুই ভাই। ভাই-বোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। অভাবের সংসারে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারিনি। ২২ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে নানা সমস্যা চলতে থাকে। স্বামী আমাকে মারধর নির্যাতন করত। বিগত ১০ বছর হলো স্বামী নেই।

তিনি জানান, ১২ বছর বয়সী ছেলে সেলিম রেজাকে নিয়ে সাভারে আমিন বাজার এলাকায় থাকি। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে এলএমএসএস পদে সাড়ে তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করতাম। বেতন যখন সাড়ে আট হাজার টাকা হলো তখন চাকরিটা চলে যায়। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এক বছর বাড়িতে ছিলাম। তখন বাবাও মারা গেল। পরে ভাবলাম কে আমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে! তাই আবারও ঢাকায় চলে এলাম। কী করব, কিছুই বুঝতেছিলাম না।

সেলিনা বেগম জানান, ঢাকায় এসে ছোট্ট একটা কাজ শুরু করি। একদিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক খালা বলল, কিরে তোর চাকরি নেই? আমি বললাম না। এরপর মর্গের ডোম ইনচার্জ যতন দাদাকে বলে লাশ কাটা ঘরে কাজ নিলাম। শুরু করলাম মর্গের লাশ কাটা-সেলাই থেকে শুরু করে ধোয়া-মোছার কাজ। তাও কোনও বেতন ছাড়াই। লাশ কাটলে একশ, দুইশ বা তিনশ টাকা পাই। আবার কোনো দিন টাকা পাই না। খালি হাতে বাসায় চলে যেতে হয়। কাজ থাকলে সারাদিন কাজ করতে হয়। বিকেলে বা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। পুরুষ বা নারী পচা গলা সব লাশের কাজই করতে হয়। সব সময় তো আর ভালো লাশ আসে না।

তিনি জানান, লাশ কাটা হলে আমি নিজেই সেলাই করি। নারী লাশ গোসল করালে কিছু পাই। এই দিয়ে সংসার চলে না। ছেলেটা ছোট, পড়ালেখা করাতে পারিনি। সংসারই চলে না, কীভাবে পড়ালেখা করাব। এখানে আমার মতো আরও কয়েকজন আছে, তাদের জীবনও এভাবেই চলছে।

মাসে যদি একটা নির্দিষ্ট বেতন থাকত, তাহলে একটু ভালো হতো। আসলে যদি সরকার আমাদের নিয়োগ দিত তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। সব জায়গায় নারীদের পদচারণা আছে। তবে এখানে কেন নারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে না। সরকারের কাছে আবেদন করি যেন এখানে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এভাবে সংসার চলে না।

 

Show More

Related Articles

Back to top button