“গন্ধগোকুল” এদের ধরা, শিকার করা, খাঁচায় পোষা বা বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ
গন্ধগোকুল (ইংরেজি: Asian palm civet; বৈজ্ঞানিক নাম: Paradoxurus hermaphroditus) ‘সাধারণ বা এশীয় তাল খাটাশ’, ‘ভোন্দর’, ‘নোঙর’,‘সাইরেল’ বা ‘গাছ খাটাশ’ নামে পরিচিত। তালের রস বা তাড়ি পান করে বলে তাড়ি বা টডি বিড়াল নামেও পরিচিত। গন্ধগোকুল বর্তমানে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুলের বাস। গন্ধগোকুল স্তন্যপায়ী শ্রেণীভুক্ত একটি প্রাণী।
এরা মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২-১১২ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে লেজই ৪৪-৫৩ সেন্টিমিটার।লেজের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকার ৫৩ সেন্টিমিটার।ওজন ২.৪-৫.০ কেজি। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থি থাকে। গন্ধগোকুলের গাট্টাগোট্টা দেহটি স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত।
গন্ধগোকুল নিশাচর। খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি-কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে।গন্ধগোকুলের ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রায় পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। একসময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে কৃত্রিম বিকল্প সুগন্ধি তৈরি হয়। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থির নিঃসরণের মাধ্যমে নিজেদের সীমানা নির্ধারণ করে। মূলত একাকী হলেও প্রজননের সময় স্ত্রী-পুরুষ একত্রে থাকে। বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল ছানা প্রসবের উপযুক্ত স্থান। কিন্তু খোঁড়লের অভাবে গাছের ডালার ফাঁকে, পরিত্যক্ত ঘর বা ইটের ভাটা, ধানের গোলা, তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। প্রতিবার ছানা হয় তিনটি। ছানারা চোখ খোলে ১০-১২ দিনে। মা-গন্ধগোকুল দেহের সঙ্গে লেজ মিলিয়ে একটি বৃত্তের সৃষ্টি করে। ছানারা কখনোই বৃত্তের বাইরে যায় না। প্রায় ছয় মাস বয়সে ছানারা সাবালক হয়।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
Satchori National Park, Habiganj, Sylhet
February-2021
Canon 7D Mark II
“এই প্রাণীসহ সকল দেশি ও বন্য প্রাণী বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত।এদের ধরা, শিকার করা, খাঁচায় পোষা বা বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।