সংবাদদাতা: প্রেমিক অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় অভিমানে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রেমিকা চিরকুট লিখে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যাকারী সেই কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ৯ আগষ্ট সকালে মমতা মিতুর মামা মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ধর্ষণ, আত্মহত্যার প্ররোচণা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শণের অভিযোগে প্রেমিক রাজুসহ চারজনকে আসামী করে ফুলবাড়ী থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন।
এ দিকে মামলার নয় দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মুল আসামী রাজুসহ অন্যদের আটক করতে না পাড়ায় বাদীর পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান মমতা মিতুর মা মদিনা বেগম।মিতুর মা মদিনা বেগম দ্রুত আসামীদেরকে আটক করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বাদী জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের মেয়ে এবং শিমুলবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মমতা মিতু (১৫)’র সাথে একই এলাকার দলিল লেখক মকু মিয়ার অনার্স পড়–য়া ছেলে রাজু মিয়া (২২)’র প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
প্রেমিক রাজু অন্য মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে গত ৮ আগষ্ট বাড়ীতে বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রেমিক রাজুর বাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলায় ক্ষোভে চিরকুট লিখে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে প্রেমিকা মমতা মিতু (১৫) আতœহত্যার করেছে। এঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে,মমতা মিতুর বাবা ৭ বছর আগে মারা যান। মা মদিনা বেগমসহ মিতু মামা মমিনুল ইসলামের বাড়ীতে থাকেন। সাত বছর থেকেই মিতু মামার বাড়ীতে থাকতেন। সেখান থেকে মিতু পড়াশুনা করেন।
জীবিকার তাগিতে মা মদিনা বেগম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন। মাঝে মধ্যেই মেয়ে মিতুর জন্য কিছু টাকা পাঠাতেন। বাকী সব কিছুই বহন করতেন মামা মমিনুল ইসলাম।
রাজুর সঙ্গে মমতার প্রেমের সম্পর্কের কথা সকলেই জানে। প্রায় এক বছর ধরে তাদের মাঝে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে মামলার বাদী মমিনুল ইসলাম জানান।
৩০ জুলাই গভীর রাতে রাজু মমতার সাথে সাক্ষাত করতে আসলে বাথরুমে আপত্তিকর অবস্থায় রাজুকে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা করলেও ছেলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
পরের দিন ফুলবাড়ী থানার পুলিশ গিয়ে রাজুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে রাজু ও তার পরিবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে আমরা কোন প্রকার মামলা করিনি। পরে সন্দেহজনক আটক মামলায় রাজুকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
জামিনে বেরিয়ে এসে অন্যত্র বিয়ে করে বাড়ীতে নতুন বউ নিয়ে আসে রাজু। মামা মমিনুল ইসাম আরও জানান, আমার ভাগিনি মমতা মিতু এতিম মেয়ে তার বাবা অনেক আগেই মারা যান। মা জীবিকার তাগিতে ঢাকার একটি গার্মেন্সে চাকুরী করেন। মিতুকে আমরাই ছোট থেকেই পড়ালেখাসহ মানুষ করেছি।
ভন্ড প্রতারক রাজু আমার নিস্পাপ ভাগনিকে ফাঁকি দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় মিতু ক্ষোভে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রতারক রাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এর আগে গত ৮ আগষ্ট রাজুর বাড়িতে বৌ- ভাতের অনুষ্ঠান চলাকালীন বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে চিরকুট লিখে ক্ষোভে,অভিমানে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মমতা মিতু।
চিরকুটে লেখা ছিল,“আমি মমতা মিতু। আমি রাজুকে খুব ভালবাসি। রাজুর জন্য আত্মহত্যা করলাম। কারণ আমি ও রাজু দুজনেই দুজনকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু রাজুর মা-বাবা আমাদের সর্ম্পকটা মানতে চান না। তাই রাজুর বিয়ে দিয়েছে। আজ ওর বৌ-ভাত, আমি এটা মানতে পারছিনা। তাই আমি এই পৃথিবী ছাড়লাম।কিন্তু এই শাস্তি আমি একাই ভোগ করছি না। আমি চাই আমাদের এই সর্ম্পকটার মাঝে যারা বাঁধা ছিল,তারা যেন আইনি শাস্তি পায়। ইতি মিতু—।
খবর পেয়ে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে যান এবং পরের দিন লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রামে পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই এনামুল জানান, বাদী ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় এবং দন্ডবিধি ৩০৬ ও ৫০৬ ধারায় চারজন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর-০৯ তারিখ-০৯/০৮/২০২১। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।