Uncategorized

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মুক্তির মূল ঘটনা

প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর ইয়াহুদি মুনিব তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য কঠিন শর্ত দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল যে তিনি দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম না হন। এ নিয়ে মুখরোচক ও আবেগঘন ঘটনা প্রচারিত হয় বেশি। অথচ হাদিসে পাকে তাঁর মুক্তির মূল ঘটনাটি ওঠে এসেছে। তাঁর মুক্তির মূল ঘটনা কোনটি?

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। সে বর্ণনার একপর্যায়ে তাঁর দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনাও ওঠে এসেছে। এ ঘটনায় কিছু কথার সঙ্গে হাদিসের বর্ণনার মিল নেই। আর তাহলো এমন-

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মনিব ছিল একজন ইয়াহুদি। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মুক্তি চাইলেন তখন ইয়াহুদি এই শর্তে তাকে মুক্তি দিতে রাজি হল যে, নির্দিষ্ট কিছু দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার দিতে হবে এবং ৩০টি খেজুর গাছ রোপণ করবে। খেজুর গাছে খেজুর ধরলে তবেই সে মুক্ত হবে।

কারণ হজরত সালমান ফারসিকে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না ইয়াহুদির। আর সালমান ফারসির পক্ষে ৬০০ দিনার যোগাড় করা কঠিন ছিল। আর ৬০০ দিনার যোগাড় করলেও খেজুর গাছ রোপণ করে তাতে ফল ধরে ফল পাকানোও ছিল অনেক সময়ের ব্যাপার।

এ ঘটনায় যে বিষয়টি ব্যতিক্রমভাবে উপস্থাপন করা হয়; তাহলো-

৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করা এবং ৩০টি খেজুর গাছ রোপন, বড় হওয়া এবং ফল ধরা। এ ঘটনায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেজুর গাছ রোপনের বর্ণনায়ও রয়েছে বাড়াবাড়ি। যা বলা হয়, আসলে বর্ণনাটি এমন নয়। তাতে বলা হয়‘প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন গর্ত করার জন্য। আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে আগুনে পোড়ানো বীজ রোপন করেছিলেন। আর তাতে পানি দিয়েছিলেন হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু। শর্ত ছিল রোপন ও পানি দেওয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত পেছনে ফিরে তাকানো যাবে না।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু গর্ত করলেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুরের বীজ রোপণ করলেন। হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু পানি দিতে থাকলেন; পেছনে তাকালেন না।

বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন- আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই পোড়া খেজুরের বীজ থেকে হাঠ হয়েছে। প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেছে।’

সত্যিই কি মূল ঘটনা এমন?

বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনায় ঘটনাটি হুবহু এমন নয়। হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণ ও দাসত্ব থেকে মুক্তির বর্ণনাটি বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ইসলাম গ্রহণের দীর্ঘ ঘটনার শেষের দিকে এসেছে-

‘…এরপর (ইসলাম গ্রহণের পর) দাসত্বের কারণে সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বদর ও ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন-

‘সালমান তুমি তোমার মনিবের সাথে ‘মুকাতাবা’ (অর্থের বিনিময়ে দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার চুক্তি) কর। আমি চল্লিশ উকিয়া এবং ৩০০ খেজুর গাছের বিনিময়ে ‘মুকাতাবা’ চুক্তি করলাম; যে ৩০০ গাছ একেবারে চারা লাগানোর গর্ত থেকে প্রস্তুত করতে হবে।’

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইকে (দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে) সহায়তা কর। তখন সাহাবাগণ আমাকে সাহায্য করলেন; কেউ দিলেন ত্রিশটি চারা, কেউ বিশটি, কেউ পনেরটি আবার কেউ দশটি; প্রত্যেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী (খেজুরের চারা) দিলেন। এভাবে ৩০০ চারা হয়ে গেল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও এগুলো লাগানোর জন্য গর্ত কর। এরপর (গর্ত করা হয়ে গেলে) আমাকে জানাবে, আমি নিজ হাতে চারাগুলো রোপণ করব। আমি গর্ত করলাম। সাথীরা আমাকে এতে সাহায্য করল। গর্ত করা শেষ হলে প্রিয় নবিকে জানালাম।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে নিজ হাতে চারাগুলো রোপণ করলেন। আমরা এগিয়ে এগিয়ে দিলাম আর তিনি নিজ হাতে সবগুলো চারা রোপণ করলেন।

যে সত্তার হাতে সালমানের প্রাণ তাঁর কসম! ৩০০ চারার একটিও মরেনি! এভাবে তিনশ খেজুর গাছের শর্ত পূরণ হলো। বাকি থাকল চল্লিশ উকিয়া (স্বর্ণ)।

একদিন এক যুদ্ধাভিযান থেকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে প্রিয় নবির কাছে মুরগির ডিম পরিমাণ স্বর্ণ এল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে খোঁজ করে বললেন- ‘মুকাতাবা’ চুক্তিকারী পারস্যের লোকটি কোথায়?

লোকেরা (সাহাবারা) আমাকে ডেকে আনল। তখন প্রিয় নবি বললেন- এই নাও, এটি দিয়ে তোমার উপর ধার্যকৃত (চল্লিশ উকিয়া) স্বর্ণ আদায় কর। তা দেখে আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল এ (সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ) দিয়ে কীভাবে আমার উপর ধার্যকৃত চল্লিশ উকিয়া আদায় হবে?! প্রিয় নবি বললেন, (এটিই) নিয়ে যাও, এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা আদায় করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।

সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তা নিলাম এবং তাদের (চল্লিশ উকিয়া আদায়ের) জন্য ওজন দিলাম। যে সত্তার হাতে সালমানের প্রাণ তাঁর কসম, ওই ছোট্ট স্বর্ণ টুকরাটি ৪০ উকিয়া হলো!

এভাবে আমি আমার উপর ধার্যকৃত স্বর্ণও আদায় করলাম এবং ‘দাসত্ব’ থেকে মুক্ত হলাম। এরপর আমি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খন্দকযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম। পরবর্তীতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সব যুদ্ধেই আমি অংশগ্রহণ করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, তবারানি, মুসনাদে বাযযার)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে বানানো ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Show More

Related Articles

Back to top button