কুমিল্লা জেলালাকসাম
লাকসামে ঘর পেয়ে আনন্দে ভাসছে হিজড়া সম্প্রদায়
শহীদুল ইসলাম শাহীন: বছরের পর বছর ঘর না থাকার কষ্টের জীবন শেষ হতে যাচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের। সে সমাজের মানুষগুলোর এক টুকরো জমি ও একটি বাড়ি তাদের স্বপ্ন। অবশেষে তাদের স্বপ্নপূরণ হলো মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের জন্য তৈরি করা ঘর পাওয়ার মধ্যে দিয়ে। লাকসাম উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় তৈরি করা আধা পাকা ঘরে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি ও জমির দলিলসহ পেয়েছে লাকসামে ৫৮ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার।
দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলার তুলনায় লাকসামে প্রকল্পের নির্মিত ঘরে এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম বা সমস্যা দেখা যায়নি। এমনকি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত স্থান নির্ধারণে বেশ রুচির পরিচয় দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়কের পাশ ঘেরা এসব ঘরে বসবাস করে উপকারভোগীরা উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত। সোম ও মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় আধা পাকা ঘরগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে লাল রঙের টিনে। দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম।
মুদাফরগঞ্জ চিকোনিয়া সড়কের পাশে তৈরি করে ৫ টি ঘর পরিদর্শন করে দেখা যায়।
বরাদ্দপ্রাপ্ত লোকজন নিজেদের মতো করে ঘর সাজিয়ে নিয়েছেন। এ ঘরের মধ্যে জয়া সিকদার হিজড়ার নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।জয়া হিজড়ার ঘরে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের বারান্দার মধ্যে দুইজন বসে বসে রান্না করার জন্য কেউ তরকারি কাটছে কেউ চাউল দেখছেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন তারা। ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত জয়া সিকদার হিজড়া বলেন,আমাদের একটু জমি হবে একটা ঘর হবে, এই কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। এর ঘর পাওয়ার আগে বাজারে ভাড়া টিনের ঘরে থাকতাম তখন আমাদের কোন মর্যাদা ছিল না, নিরাপত্তা ছিল না। সবাই আমাদের অবহেলা করতো, করুণা চোখে দেখতো, অসম্মানের চোখে দেখতো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সঙ্গে আমরা মানুষ হিসেবে মর্যাদাও ফিরে পেয়েছি। এখন সবাই আমাদের মূল্যায়ন করে। বর্তমানে আমি জয়া হিজড়া, রোমানা হিজড়া ও জুই হিজড়া এখানে থাকি।
নরপাটিগুচ্ছগ্রামের একজনউপকারভোগী যোগীপাড়ার মৃত জাফর মিয়ার স্ত্রী আমরুজ বেগম ৮ শতক জায়গা ও আধা পাকা ঘর পেয়ে তিনি বলেন,আমার জায়গ-জমি ছিল না। ভাড়া জায়গায় থাকতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমাদের মা জননী হাসিনা জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে আমি তাতে অনেক খুশি। এখন নিজের একটা ঠিকানা পেয়েছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র দাস তথ্য সুত্রে, মজিব শতবর্ষের উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহার হিসাবে জমির দলিলসহ পেয়েছে লাকসামে ৫৮ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। এর মধ্যে উপজেলা নরপাটি গুচ্ছ গ্রামে ২৪ টি, কৃষ্ণপুর গুচ্ছ গ্রামে ১৪ টি, চিকোনিয়া গ্রামে ৫ টি, কৈত্রা গ্রামে ৫ টি ও কাগৈয়া গুচ্ছ গ্রামে ৭ টি পরিবার। এছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থআয়নে এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির ৩ টি, সেতু বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিকের ৫টি, সমাজ সেবক নজরুল ইসলাম ১ টি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ টি সহ ১০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব মিলিয়ে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে ৬৮ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির দলিল ও ঘরের কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খাস জায়গা নির্বাচন ও ভূমিহীন উপকারভোগী নির্বাচনে সকল সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপক্রমে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।ঘরে কাজ অনেক ভালো হয়েছে, নতুন ঘরে উপকারভোগীরা অনেক খুশি। তারই অংশ হিসাবে উপজেলায় আরো ৩৪ জন তালিকাভুক্ত ভূমিহীন রয়েছে। এদের পুর্নবাসন করতে পারলে লাকসামকে ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।