কোরআনের সত্যতা প্রমাণ করেছে বিজ্ঞান
পবিত্র কোরআনে সুরা হা-মিম সাজদায় ৫৩ নম্বর আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে :
سَنُرِیۡهِمۡ اٰیٰتِنَا فِی الۡاٰفَاقِ وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُ الۡحَقُّ ؕ اَوَ لَمۡ یَکۡفِ بِرَبِّکَ اَنَّهٗ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَهِیۡدٌ
আমি অচিরেই ওদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বজগতে দেখাবো এবং ওদের নিজেদের মধ্যেও; ফলে ওদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ (কুরআন) সত্য। এ কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী?
আমার মধ্যে একটি প্রশ্ন কাজ করতো যে কোরআন যখন নাজিল হয়, সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে, তখনও কোরআন সত্য ছিল; তাহলে আল্লাহ তাআলা ভবিষ্যতের ব্যাপারে কেন বললেন?
খেয়াল করে দেখুন, ‘سَنُرِیۡهِمۡ:সানুরীহিম’ শব্দটি ফিউচার টেন্স, ভবিষ্যত কাল বোঝায়। কোরআন তো তখনও তো হক ছিল যখন নাজিল হয়, তাহলে কেন বলা হলো ভবিষ্যতে হক স্পষ্ট হবে? এর কী অর্থ হতে পারে? কেন ভবিষ্যত কাল ব্যবহার করা হলো, যেখানে কোরআনে বর্ণিত বিষয়-আশয় সর্বকালের জন্য হক?
অনেক পরে এসে আমি বুঝতে পারি যে একথা হালের ‘বিজ্ঞানের যুগ’-এর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শন বিজ্ঞানের যুগেও স্পষ্ট হবে। কীভাবে স্পষ্ট হবে তার বর্ণনা অন্য একটি আয়াতে পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ وَحُمْرٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ، وَ مِنَ النَّاسِ وَ الدَّوَآبِّ وَ الۡاَنۡعَامِ مُخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُهٗ کَذٰلِکَ ؕ اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰهَ مِنۡ عِبَادِهِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ
‘পাহাড়ে মধ্যে রয়েছে নানা রকমের রঙ, কোনোটা সাদা, কোনোটা লাল আবার কোনোটা নিকষ কালো রঙের। এভাবে রঙ-বেরঙের মানুষ, জন্তু ও গৃহপালিত পশু রয়েছে। আল্লাহর দাসদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল।’ (সুরা ফাতির : আয়াত ২৭-২৮)
পাহাড়ের কথা বলার পরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
‘একমাত্র জ্ঞানসম্পন্নরাই আল্লাহকে ভয় করেন।’
খেয়াল করে দেখুন!
পর্বত বিজ্ঞানের রেফারেন্স দিয়ে আল্লাহ একথাটি বলেছেন? এখানে ‘জ্ঞানসম্পন্ন’ বলে পাহাড় বিষয়ে যারা জ্ঞান রাখেন তাদের ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের কথা টেনে কেন বলা হলো জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরাই কেবল আল্লাহকে ভয় করে?
যদি দু’টি আয়াতকে সামনে রেখে আপনি ভাবেন, তাহলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। কোরআন যখন নাজিল হয়, তখন সেটা কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল, আকিদার বিষয় ছিল। এই আয়াতে এই ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া হয়েছে যে-
এমন এক সময় আসবে যখন পরীক্ষিত বিজ্ঞান দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই আয়াতের উদ্দেশ্য। যখন কোরআন নাজিল হয় তখন বিজ্ঞানপূর্ব সময় ছিল, গতানুগতিক সময়কাল ছিল, ওই সময় প্রকৃতি বিজ্ঞানের রহস্য আবিষ্কৃত হয়নি।
কোরআনে ওই (নাজিলের) সময়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, কেবল বিশ্বাসের বিষয় হিসাবে বলা হয়েছে। তাতে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে একসময় পরীক্ষিত বিজ্ঞানের যুগ আসবে, যখন মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সবকিছু গ্রহণ করবে।
মানুষ যে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে গ্রহণ করবে তারই সমানুপাতে কোরআনের সত্যতা প্রমাণ হবে। কোরআন ‘প্রোভেন ফ্যাক্ট’ হয়ে যাবে। অর্থাৎ যেটা ওই সময় কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল তা তখন প্রমাণিত বিষয় হয়ে যাবে। এটা অনেক বড় ভবিষ্যদ্বাণী। বর্তমানে বিজ্ঞানের যে বিকাশ হয়েছে, এটা সেই ভবিষ্যদ্বাণীরই সত্যায়ন।
অনূদিত
মূল : মাওলানা ওহিদুদ্দিন খান
তর্জমা : মওলবি আশরাফ